
সুন্দরপুরের টেকখালা: প্রযুক্তি আর পরম্পরার মিলন
বাংলার সবুজ গ্রাম সুন্দরপুর। চারপাশে ধানের ক্ষেত, পাখির ডাক আর নদীর কলকল ধ্বনি। এই গ্রামের মাঝখানে এক অনন্য নারী, যাঁকে সবাই ভালোবেসে ডাকে “টেকখালা”।
আসল নাম ফারজানা আনোয়ার। শহরে বড় হয়ে আইটি পেশায় সফল হয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে ফিরে এলেন গ্রামের মাটিতে। তাঁর স্বপ্ন—একটি মডেল গ্রাম গড়া, যেখানে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, কিন্তু সবকিছু হবে শরীয়াহ অনুযায়ী এবং পরিবারকেন্দ্রিক জীবনধারায় গড়া।
টেকখালা বিশ্বাস করতেন—৬০ থেকে ৮০’র দশকের পারিবারিক বন্ধনই ছিল বাংলাদেশের আসল শক্তি। আর সেই মূল্যবোধকে টিকিয়ে রেখেই প্রযুক্তির সুফল গ্রামে আনতে হবে।
স্টারলিঙ্ক আসছে, কিন্তু…
গ্রামে একদিন খবর এল—স্টারলিঙ্ক নামের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আসছে বাংলাদেশে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট, কোনো টাওয়ারের ঝামেলা নেই! সবাই উচ্ছ্বসিত।
কিন্তু টেকখালা চিন্তিত।
“যে ইন্টারনেট সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারে, সে-ই তাকে বিপথেও নিতে পারে,” তিনি বললেন।
তিনি বোঝালেন—গতি নয়, গন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই গ্রামের সবাই মিলে ঠিক করল—
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার থাকবে সীমিত ও নজরদারির আওতায়
শুধুমাত্র শিক্ষা ও ইসলামি অনুপ্রেরণামূলক কনটেন্ট ব্যবহার করা যাবে
হারাম কনটেন্টের ওয়েবসাইট ব্লক করা হবে
প্রতিটি পরিবারকে শেখানো হবে—শরীয়াহ অনুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে হবে
সরকারের ভূমিকা
সরকার তখন নতুন ইন্টারনেট নীতিমালা নিয়ে ভাবছে। অনেকে বলছে, কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ মানেই স্বাধীনতার বিরোধিতা। কিন্তু টেকখালা বললেন,
“স্বাধীনতা মানে সব কিছু করা নয়, যা সঠিক তা বেছে নেওয়া।”
তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের জন্য তৈরি করলেন একটি লোকাল সার্ভার। এতে ছিল কুরআন শিক্ষা, হালাল অনলাইন কোর্স, কৃষি-পরামর্শ, ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ভিডিও।
পরিবার ফেরার গল্প
টেকখালার সবচেয়ে প্রিয় প্রকল্প ছিল—”পারিবারিক সন্ধ্যা”। প্রতি বৃহস্পতিবার সবাই একসঙ্গে বসত, গল্প হতো, কবিতা পড়া হতো, বুড়োদের স্মৃতি শোনা যেত। কোনো ফোন বা স্ক্রিনের ঠাঁই থাকত না।
তিনি বলতেন—
“একটা সময় ছিল, আত্মীয় স্বজন ৩ গ্রাম পেরিয়ে খোঁজ নিতে আসত। সেই বন্ধন আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
সুন্দরপুর বদলে যাচ্ছে
এক বছরের মধ্যেই গ্রামটি পাল্টে গেল—
মেয়েরা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং শিখছে
ছেলেরা মোবাইল অ্যাপে গ্রামীণ পণ্য বিক্রি করছে
কৃষকরা ভিডিও কলে পরামর্শ নিচ্ছে
মসজিদে শুধু আজান নয়, প্রযুক্তির ক্লাসও চলছে
আর এই সব কিছুতেই ছিল শরীয়াহর গাইডলাইন, পরিবারের গুরুত্ব, আর গ্রামের প্রতি ভালোবাসা।
উপরে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়ায়, আর নিচে সুন্দরপুরে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠছে—যেখানে প্রযুক্তি আর তৌহিদের বন্ধনে গাঁথা জীবন।
আর সেই জীবনের মাঝে, এক কোণে বসে, হাতে ল্যাপটপ আর চায়ের কাপ—হেসে চলেছেন আমাদের টেকখালা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যে দিশা খুঁজছে, সেই পথের আলো হয়তো তিনিই।